মৃত্যু

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন  বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।''

অনবরত পরিবর্ত্তনশীল নশ্বর সংসারে সকলই অনিশ্চিত, কেবল মৃত্যুই নিশ্চিত। ছায়া যেমন বস্তুর অনুগামী, মৃত্যুও তেমনি দেহীর সঙ্গী।

গীতায় ভগবানের উক্তি-

" জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ ।

তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।" (গীতা ২/২৭)

জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। মৃত্যুর হাত হইতে পরিত্রাণ লাভের উপায় নাই। মৃত্যু কাহাকেও উপেক্ষা করে না। অগণ্য গণ্য পরিবেষ্টিত লোক সংহারকারী বিবিধ অস্ত্র - শস্ত্র সমন্বিত সম্রাট হতে বৃক্ষতলবাশী ছিন্নকন্তা - সম্বল ভিখারী পর্যন্ত সকলকেই একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হইতে হবে।

কর্ম্মক্ষেত্রে সংসারের কোন কার্য্যের বা কোন বিষয়ের স্থিরতা ও নিশ্চয়তা নাই; কিন্তু মৃত্যু নিশ্চয়ই হবে। মৃত্যুর মত অবশ্যম্ভাবী নিশ্চয়তা আর কিছুই নাই। প্রাতঃ কালে সূর্যোদয় হলে সূর্য্যাস্ত যেমন অবশ্যম্ভাবী; দিবা অবসানে রাত্রি যেমন নিত্য সংঘটিত হতেছে, তেমনি জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু হবেই। শারীরিক বলবীর্য, ধন-জন, সম্পদ, মান, গৌরব, প্রতাপ ও প্রভূত্ব প্রভৃতি সর্ব গর্ব মৃত্যুর নিকট খর্ব্ব হবে। শাস্ত্রে পাওয়া যায় যে, সত্যযুগ হতে কলিযুগ পর্যন্ত ৭ জন মৃত্যুকে উপেক্ষা করে অমর হয়েছেন। যথা-

‘’অশ্বত্থামা, বলির্ব্যাস, হনুমান চ বিভীষণ।

কৃপ পরশুরাম চ সপ্ততে চিরঞ্জীবীন।।”

অর্থাৎ,- অশ্বত্থামা, পাতালব্ধ বলিরাজ, ব্যাসদেব, হনুমান, বিভীষণ, কৃপাচার্য্য- এই ৭ জন চিরঞ্জীবী  বলে শাস্ত্রে উক্ত আছে এবং জন্মতিথি পূজার সময় এই ৭ নামের উল্লেখ করা হয়।

''বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি।

তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য- ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী।।''

 

অর্থাৎ,- মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ  করে নতুন দেহ ধারণ করেন।(গীতা ২/২২)

মৃত্যুর সময় কি ভাববেন ?

গীতায় ভগবান বলেছেন,দেহ ত্যাগ করার সময় যেভাবে ভাবিত হয়ে একজন চিন্তা করে, পরবর্তী জীবনে নিঃসন্দেহে সেই ভাব সম্পন্ন দেহ সে প্রাপ্ত হবে। সারাটা জীবনে অত্যন্ত আসক্ত হয়ে মানুষ যে জিনিসটি লাভ করে বা সদা-সর্বদা জল্পনা - কল্পনা বা মন করে, মৃত্যুর সময়ে সে তাই স্মরণ করলে সে অনুরুপ দেহ প্ৰাপ্ত হবে । একেই বলে কৰ্মচক্ৰ অৰ্থাৎ জন্ম,মৃত্যু,জরা ও ব্যাধির মাধ্যমে চুরাশি লক্ষ যোনিতে পরিভ্ৰমণ। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,-

'' অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্তা কলেবরম।

যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ''।

অর্থাৎ,- ''মৃত্যুকালে দেহত্যাগের সময়ে যে আমাকে স্মরণ করে, সে তৎক্ষণাৎ আমার ভাব প্ৰাপ্ত হয়, এতে কোন সন্দেহ নেই''।(গীতা ৮/৫)  

''যং যং বাপি স্মরন্ ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম্।

তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতঃ।।''

অর্থাৎ,- অন্তিমকালে যিনি যে ভাব স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি সেই ভাবে ভাবিত তত্ত্বকেই লাভ করেন।এটিই হচ্ছে যথাৰ্থ পরীক্ষায় উত্তীৰ্ণহওয়ার অৰ্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণকে স্মরণ করার উপদেশ।(গীতা ৮/৬)

ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণকে মৃত্যুর পূৰ্ব মুহূর্তে কে স্মরণ করতে পারে ?

কর্মী, জ্ঞানী এমন কি যোগীরাও মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণকে স্মরণ করতে পারে না । একমাত্ৰ সম্পূৰ্ণ  রুপে শরণাগত শুদ্ধ ভক্তই মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের সচ্চিদানন্দময় দিব্যরুপকে স্মরণ করতে পারেন । কারও হৃদয়ে বিন্দুমাত্ৰ জড় কামনা - বাসনা থাকা পৰ্যন্ত সে মৃত্যুর সময়ে ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণকে স্মরণ করতে পারে না। যিনি তাঁর মনসহ সমগ্ৰ ইন্দ্ৰিয়গুলিকে সম্পূৰ্ণ রূপে সারা জীবন ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত করেছেন, তিনিই একমাত্ৰ সমগ্ৰ জড় কলুষ থেকে মুক্ত হতে পারেন।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, এই জড় কলুষ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য একমাত্ৰ পন্থা যুগধর্ম হরিনাম মহামন্ত্ৰ সংকীর্ত্তন করা,-

আপনে সবারে প্রভু করে উপদেশে।

কৃষ্ণ-নাম মহা-মন্ত্র শুনহ হরিষে।।

''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।''

প্রভু বলে,  কহিলাম এই ‘মহামন্ত্র’।

ইহা ‘জপ’ গিয়া সবে করিয়া নির্বন্ধ।।

ইহা হইতে সর্ব - সিদ্ধি হইবে সবার।

সর্বক্ষণ বল ইথে বিধি নাহি আর।।

কি ভোজনে, কি শয়নে, কিবা জাগরণে।

অহর্নিশি চিন্ত কৃষ্ণ বলহ বদনে।।

সুতরাং আমাদের সকলের কৰ্তব্য মানব - জীবনের এই অপূৰ্ব সুযোগটি গ্ৰহণ করা, যাতে মৃত্যুর সময়ে ভগবান, শ্ৰীকৃষ্ণকে স্মরণ করে আমরা চিন্ময় ভগবৎ রাজ্যে ফিরে যেতে পারি।

সদা তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন

''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।''

জয় নিতাই জয় গৌরহরি।। জয় নিতাই জয় গৌরহরি।। জয় নিতাই জয় গৌরহরি।।