পঞ্চম দোল
কেন পঞ্চম দোল???
“ফাল্গুনপূর্ণিমা তিথি নক্ষত্র ফাল্গুনী।
জনম লভিল গোরা গৌরগুণমণি।।”
মহাপ্রভুর জন্মদিনে গৌরপূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলায় ফাগুররঙ খেলার প্রচলন হয়। ফাল্গুনপূর্ণিমা
তিথিতেই শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় প্রায় সারা ভারতে। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে, “দোলযাত্রা। যাত্রা শব্দের অর্থ গমন। পরে অর্থ আসিয়াছে, দেবতার উৎসব। যে দেবতা গমন করেন, বহু লোক তাঁহার অনুগমন করে, তখন বলি যাত্রা। যেমন, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। দুর্গাপূজার সময় দুর্গা গমন করেন না, দুর্গাযাত্রা বলিতে পারি না। দোল, দোলন। … দোলযাত্রা একটি নয়, বৎসরে দুইটি। একটির নাম দোল, অপরটির নাম হিন্দোল, চলিত নাম ঝুলনযাত্রা। সূর্যরূপ বিষ্ণু বৎসরে দুইবার দোলায় আরোহণ করেন।” দোলযাত্রার তিনদিন পর বীরভূমের নানুর থানার বড়া সাওতা গ্রাম পঞ্ছায়েতের বড়া গ্রামে পঞ্চমীর ভোরে চাঁচর পুড়িয়ে শুরু হয় পঞ্চমদোল। পঞ্চমীতে বিগ্রহের গ্রাম পরিক্রমা, দুপুর থেকে কীর্তন গান চলে। সন্ধ্যায় কীর্তন ও দোলগান হয়ে রাতে ক্রমান্বয়ে দুবার আবির খেলা হয়। ষষ্ঠীর দিন দুপুরে অন্নকূট ও বিকেলে ধুলোট হয়ে শেষ হয় উৎসব।
শাস্ত্রমতে পঞ্চম কথাটির মধ্যে অনেক তত্ত্ব লুকিয়ে আছে। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষকে ছাড়িয়ে পঞ্চম পুরুষার্থ প্রেমকে স্বীকৃতি দেন মহাপ্রভু, কারণ প্রেমই শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্য্যের আস্বাদন করায়।
‘’ভক্ত ভেদে রতি ভেদ পঞ্চ পরকার।
শাস্ত রতি দাস্য রতি সখ্য রতি আর।।
বাৎসল্য রতি মধুর রতি এ পঞ্চ বিভেদ।
রতিভেদে কৃষ্ণভক্তি রস পঞ্চ ভেদ।।
শান্ত দাস্য সখ্য বাৎসল্য মধুর রস নাম।
কৃষ্ণ ভক্তি রস মধ্যে এ পঞ্চ প্রধান।।‘’
শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর প্রেমভক্তির পঞ্চম রস। মধুর রসেই পাঁচটি গুণ পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময় গোদাবরী তীরে পার্ষদ রায়রামানন্দের সঙ্গে কথোপকথনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেনশ্রীশ্রীগৌরাঙ্গমহাপ্রভু।
‘’প্রভু কহে কহ মোরে সাধ্যের নির্ণয়।
রায় কহে স্বধৰ্ম্মাচরণে কৃষ্ণভক্তি হয়।।
এহ বাহ্য প্রভু কহে আগে কহ আর।
রায় কহে কৃষ্ণে কৰ্ম্মাপণ সৰ্ব্বসার।।
প্রভু কহে এহ বাহ্য আগে কহ আর।
রায় কহে স্বধৰ্ম্মত্যাগ সৰ্ব্বসাধ্যসার।।
প্রভু কহে এহ বাহ্য আগে কহ আর।
রায় কহে জ্ঞানমিশ্র ভক্তি সাধ্যসার।।
প্রভু কহে এহ বাহ্য আগে কহ আর।
রায় কহে জ্ঞান সুপ্ত ভক্তি সাধ্যসার।।
প্রভু কহে এহ বাহ্য আগে কহ আর।
রায় কহে প্রেম-ভক্তি সৰ্ব্বসাধ্যসার।।
প্রভু কহে এহ বাহ্য আগে কহ আর।
রায় কহে দাস্য-প্রেম সৰ্ব্বসাধ্যসার।।
প্রভু কহে এহোত্তম আগে কহ আর।
রায় কহে সখ্য-প্রেম সৰ্ব্বসাধ্যসার।।
প্রভু কহে এহোত্তম কিছু আগে আর।
রায় কহে বাৎসল্য-প্রেম সর্ব্বসাধ্যসার।।
প্রভু কহে এহোত্তম আগে কহ আর।
রায় কহে কান্ত-প্রেম সব্ব সাধ্য সার।।
প্রভু কহে এই সাধ্যাবধি মুনিশ্চয়।
কৃপাকরি কহ যদি আগে কিছু হয়।।
রায় কহে রাধা-প্রেম সাধ্যশিরোমণি।
যাহার মহিমা সৰ্ব্ব শাস্ত্রেতে বাখানি।।” (শ্ৰীচৈতন্যচরিতামৃত)
No comments:
Post a Comment