''সাধু/বৈষ্ণব''
সাধু কাকে বলে ? যে কেউ কি সাধু হইতে পারে???
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের কাছে সাধুর সংজ্ঞা নিরূপন করেছেন,
"অপি চেৎসুদুরাচারো ভজতে মামন্যভাক্।
সাধুরেব স মন্তব্যঃ সম্যগ্ ব্যবস্থিত হিসঃ।।''
অর্থাৎ “অতি দুরাচারী ব্যক্তিও যদি অনন্যভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন, তাকেও ”সাধু” বলে মনে করতে হবে, কারণ তিনি যথার্থ মার্গে অবস্থিত”। (গীতা ৯/৩০ ) কৃষ্ণভক্তিই জীবের সহজাত অধিকার। 'জীবের স্বরূপ হয় নিত্যকৃষ্ণ দাস'। তাই ঐকান্তিক কৃষ্ণভজনাকারী জন সাধু। যে কেউ সাধু হতে পারে। শ্রীপদ্মপুরাণে বিস্তৃত ও সুন্দরভাবে সাধুর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে-
"কৃষ্ণার্পিত-প্রাণ-শরীর-বুদ্ধিঃ শান্তেন্দ্রিয় - স্ত্রী - সুত - সম্পদাদিঃ
আসক্তচিত্তঃ শ্রবণাদি ভত্তির্যস্যেহ সাধু সততং হরের্যঃ।।''
অর্থাৎ “যিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে প্রাণ, বুদ্ধি সমস্তই সমর্পণ করেছেন, যিনি ইন্দ্রিয়, স্ত্রীপুত্র, বিষয়াদি সমস্ত ভোগবিলাস থেকে বিরত হয়েছেন, যিনি শ্রীহরির প্রতি সদা সর্বদা আসক্ত চিত্ত এবং যিনি শ্রীকৃষ্ণ - কথা শ্রবণ, শ্রীকৃষ্ণমহিমা কীর্ত্তন ইত্যাদি ভক্তি - অঙ্গ সমূহের যাজন পরায়ণ, এই জগতে তিনিই সাধু।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ছয়টি প্রতিজ্ঞা
🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸
➡প্রথম প্রতিজ্ঞাঃ
‘’তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মামনুষ্মর যুধ্য চ।
ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্মামেবৈষ্যস্যসংশয়ঃ।।‘’
অর্থাৎ,- হে অর্জুন, সর্বদা আমাকে স্মরণ করে তোমার স্বভাব বিহিত যুদ্ধ কর। তাহলে আমাতে তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পিত হবে এবং নিঃসন্দেহে তুমি আমাকেই লাভ করবে।''(ভগবদগীতা ৮/৭)।
➡দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞাঃ
‘’মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদযাজী মাং নমস্কুরু।
মামেবৈষ্যসি যুক্ত্বৈবমাত্মানং মৎপরায়ণঃ।।‘’
অর্থাৎ,- তোমার মনকে আমার ভাবনায় নিযুক্ত কর, আমার ভক্ত হও, আমাকে প্রণাম কর এবং আমার পূজা কর। এভাবেই মৎপরায়ণ হয়ে সম্পূর্ণরূপে আমাতে অভিনিবিষ্ট হলে, নিঃসন্দেহে তুমি আমাকে লাভ করবে।(ভগবদগীতা ৯/৩৪)।
➡তৃতীয় প্রতিজ্ঞাঃ
‘’তেষাং সততযুক্তানাং ভজতাং প্রীতিপূর্বকম্।
দদামি বুদ্ধিযোগং তং যেন মামুপযান্তি তে।।‘’
অর্থাৎ,- যাঁরা ভক্তিযোগ দ্বারা প্রীতিপূর্বক আমার ভজনা করে নিত্যযুক্ত, আমি তাঁদের শুদ্ধ জ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি, যার দ্বারা তাঁরা আমার কাছে ফিরে আসতে পারেন। (ভগবদগীতা ১০/১০)।
➡চতুর্থ প্রতিজ্ঞাঃ
‘’মৎকর্মকৃন্মৎপরমো মদ্ভক্তঃ সঙ্গবর্জিতঃ।
নির্বৈরঃ সর্বভূতেষু যঃ স মামেতি পাণ্ডব।।‘’
অর্থাৎ,- হে পাণ্ডব! যিনি আমার অকৈতব সেবা করেন, আমার প্রতি নিষ্ঠাপরায়ণ, আমার ভক্ত, জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাব রহিত, তিনিই আমাকে লাভ করেন।(ভগবদগীতা ১১/৫৫)।
➡পঞ্চম প্রতিজ্ঞাঃ
‘’ময্যেব মন আধৎস্ব ময়ি বুদ্ধিং নিবেশয়।
নিবসিষ্যসি ময্যেব অত ঊর্ধ্বং ন সংশয়ঃ।।‘’
অর্থাৎ,- হে অর্জুন! আমাতেই তুমি মন সমাহিত কর এবং আমাতেই বুদ্ধি অর্পণ কর। তার ফলে তুমি সর্বদাই আমার নিকটে বাস করবে, সেই সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই।(ভগবদগীতা ১২/৮)।
➡ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞাঃ
‘’মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদযাজী মাং নমস্কুরু।
মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োহসি মে।।‘’
অর্থাৎ,- হে কৌন্তেয়! তুমি আমাতে মন চিত্ত স্থির করো এবং আমার ভক্ত হও। আমার পূজা করো এবং আমাকে নমষ্কার করো। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এইজন্যই আমি সত্যপ্রতিজ্ঞা করছি যে, এভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে ।(ভগবদ্গীতা ১৮/৬৫)।
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের মহিমা অনন্য এবং খুবই শক্তিশালী, কেননা পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এবং হরিনাম এক ও অভিন্ন, কোন পার্থক্য নেই।পরম আদরে এবং অনন্য ভক্তি সহকারে জপ করার ফলেই আমরা চিন্ময় আনন্দ অনুভব করতে পারব।
সদা তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।''
No comments:
Post a Comment