Sunday, March 8, 2020


শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু
আবির্ভাব
শ্রীমন্মহাপ্রভুর শুভ আবির্ভাব উপলক্ষে বিশেষ পোষ্ট।

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রী চরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ৫৩৪ তম শুভ আবির্ভাব তিথি  ও শুভ গৌর পূর্ণিমার শুভেচ্ছা অভিনন্দন।
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯.১৫ মিঃ মধ্যে পৌর্ণমাসীর পারণ)
 ‘’নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেম প্রদায় তে।    

কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্য নাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ।।‘’

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গৌররূপে অবতরণের কারণ যুগধর্ম
অন্যান্য যুগের তুলনায় কলিযুগ অত্যন্ত অধঃপতিত। কলিযুগে ধর্মের পতনের ফলে মানুষের যে কি অবস্থা, সেই সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতে(//১০)বলা হয়েছে,-

 ''প্রায়েণাল্পায়ুষঃ সভ্য কলাবস্মিন্ যুগে জনাঃ।
মন্দাঃ সুমন্দমতয়ো মন্দভাগ্য হ্যপদ্রুতাঃ।।''
হে মহাজ্ঞানী ! এই কলিযুগের মানুষেরা প্রায় সকলেই অল্পায়ু। তারা কলহপ্রিয়, অলস, মন্দগতি, ভাগ্যহীন এবং সর্বোপরি তারা নিরন্তর রোগ আদির দ্বারা উপদ্রুত।‘’

শ্রীকৃষ্ণ - রুক্মিণী সংবাদে জানা যায়,একদিন রুক্মিণীদেবী অত্যন্ত দুঃখী মনমে কৃষ্ণকে নিবেদন করিলে হে প্রাণনাথ ! আমি ভীত হয়ে পড়েছি, কারণ শ্রীমতী রাধারানী বৃন্দাবনে তোমার বিরহে যেভাবে দিবানিশি অশ্রু বর্ষণ করে উন্মাদের মতো প্রলাপ করছেন, আমিও হয়ত একদিন তোমার পাদপদ্মের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারি। রুক্মিণী দেবীর এই প্রকার হৃদয় - বিদারক বাক্য শ্রবণ করে ভগবান কৃষ্ণের অন্তর উল্লাসিত হল, চক্ষু রক্তিমবর্ণ ধারণ করে জলে পূর্ণ হল এবং বলতে শুরু করলেন, “শ্রীরাধিকার প্রেমের মহিমা কি রকম, ওই প্রেমের দ্বারা শ্রীরাধা আমার যে অদ্ভুত মাধুর্য্য  আস্বাদন করেন, সেই মাধুর্য্যই বা কি এবং আমার মাধুর্য্য আস্বাদন করে শ্রীরাধা যে সুখ অনুভব করেন, সেই সুখই বা কি, এই সকল আমি অবশ্যই আস্বাদন করব। ঠিক সেই মুহূর্তে নারদ মুনি দ্বারকায় কৃষ্ণের সমক্ষে উপস্থিত হলেন।

রুক্মিণীদেবী উপযুক্তভাবে অতিথি সৎকার করে নারদ মুনিকে বসতে আসন দিলেন কৃষ্ণ নারদ মুনিকে আলিঙ্গন করে, আগমনের হেতু জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু নারদ মুনি কৃষ্ণপ্রেমে বিহ্বল, চক্ষু অশ্রুতে পূর্ণ এবং কণ্ঠের স্বর গদগদ, তাই কিছু বলতে পারছিলেন না। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “নারদ ! তুমি আমার প্রাণাধিক প্রিয় অথচ তোমার অন্তর দেখছি বিষন্ন। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার মনের অভিব্যক্তি আমরা কাছে প্রকাশ কর।

নারদ মুনি বলতে শুরু করলেন,- হে প্রভু ! “তুমি অন্তর্যামী, সব কিছুই তুমি জান; তোমার গুণকথা শ্রবণই হচ্ছে আমার আহার। সেই লোভে সারা সংসার ঘুরে বেড়ালাম অথচ কৃষ্ণনাম কোথাও শুনতে পেলাম না। সমস্ত সংসার কৃষ্ণনামে বিমুখ, এটিই আমার শোকের কারণ।

লোকের নিস্তারের কোনও উপায় আমি দেখতে পাচ্ছি না। ''শ্রীকৃষ্ণ তখন নারদ মুনিকে সান্ত্বনার নিমিত্ত বলতে লাগলেন, “তুমি কি ভুলে গেলে পার্বতী, শিবের কাছ থেকে মহাপ্রসাদের কণিকা না পাওয়াতে সে শিবের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, ‘তুমি যেমন মহাপ্রসাদের কণিকা আস্বাদন করে কৃষ্ণপ্রেমে উদ্দণ্ড নৃত্য করছ, অচিরেই আমি এই মহাপ্রসাদ সকল লোকের মধ্যে বিতরণ করব, যাতে সাধারণ লোকেরাও মহাপ্রসাদের কৃপা লাভ করে কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর হয়।তা ছাড়া রুক্মিণী দেবীর কাছ থেকে আজ এক অপরূপ কথা আমি শ্রবণ করলাম। তা শুনে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, শীঘ্রই শ্রীমতী রাধারানীর ভাব অঙ্গকান্তি নিয়ে এবং সুন্দর তনু, দীর্ঘ কলেবর আজানুলম্বিত বাহু নিয়ে নিজ ভক্তিযোগ সংকীর্ত্তন যজ্ঞ প্রবর্তন করবার জন্য নিজ অন্তরঙ্গ পার্ষদ পরিবৃত হয়ে নবদ্বীপে শচীগৃহে জন্মগ্রহণ করব। অতি দীনহীনভাবে আমি কলিতে অবতীর্ণ হয়ে সকলকে কৃষ্ণপ্রেমে ডুবাব।
‘’যুগধর্ম প্রবর্তাইমু নাম - সংকীর্ত্তন।
চারি ভাব - ভক্তি দিয়া নাচামু ভুবন I I
আপনি করিমু ভক্তভাব অঙ্গীকারে।
আপনি আচরি ভক্তি শিখাইমু সবারে I I’’ ( চৈঃ চঃ আদি /১৯-২০)

এই কথা প্রতিশ্রুতি দিতে দিতেই শ্রীকৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ নারদ মুনির নিকট অপূর্ব রূপমাধুরী সমন্বিত গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুরূপে প্রকাশিত হলেন। সেই দিব্যরূপ দেখে নারদ মুনি প্রেমসিন্ধুতে ভাসতে লাগলেন। তাঁর আঁখি থেকে সহস্রধারায় অশ্রুপাত হইতে লাগল। সেই গৌর রূপের তেজ কোটি কোটি সূর্য্যের তেজের থেকেও বেশি ঝলমল করছিল। তখন নারদ মুনি প্রেমে মূর্ছিত হয়ে চোখ মুদ্রিত করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে কৃষ্ণ তাঁর সেই রূপ সম্বরণ করলেন। নারদ মুনি গৌররূপ আর দেখতে না পেয়ে, পুনঃদর্শনের জন্য ব্যাকুল হলেন। তখন দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- “নারদ ! তোমার উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই, তুমি অবাধে সর্বত্র যাতায়াত করতে পারবে।

এখন গিয়ে ব্রহ্মা, শিব, আদি সকলের কাছে প্রচার কর যে, আমি কলিযুগে সপার্ষদ সহ ধরাধামে  অবতীর্ণ হয়ে নাম - সংকীর্ত্তনের মাধ্যমে কৃষ্ণপ্রেম প্রদান করব। ভগবান কৃষ্ণের এই কথা শুনে নারদ মুনির সমস্ত দুঃখ অপসারিত হল এবং বীণা বাজিয়ে গৌর রূপের চিন্তা করতে করতে  নারদ মুনি দ্বারকা নগরী থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন।

যার কৃপায় আমরা গৌর পেলাম সেই মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য প্রভুর শ্রীচরণে শতকোটি প্রণাম।শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য সম্বন্ধে চৈতন্যচরিতামৃতে অনুভাষ্যে এইরূপ লিখিয়াছেন ইনি আচার্য্য,বিষ্ণুর আচরণ মঙ্গলময়।

"জগত-মঙ্গল অদ্বৈত, মঙ্গল-গুণধাম।
মঙ্গলচরিত্র সদা, মঙ্গল যাঁর নাম।।
মহাবিষ্ণুর অংশ অদ্বৈত গুণধাম।
ঈশ্বরের অভেদ তেঁহ অদ্বৈত পূর্ণনাম।।
বৈষ্ণবের গুরু তেঁহ জগতের আর্য।
দুই নাম মিলনে হৈল অদ্বৈত আচার্য।।

স্বয়ং ভগবান শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাবের পূর্ব্বে তাঁহার গুরুবর্গের আবির্ভাব।শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য গুরুবর্গের সহিত আবির্ভূত হইয়া 'কলি যুগ' এর ভাবিকালোচিত অনাচারের প্রাবল্য এবং জগৎ কৃষ্ণভক্তি শূন্য হইয়াছে।এই অবস্থায় কোন অংশাবতার অবতীর্ণ হইয়া জগন্মঙ্গল বিধান করিতে পারিবেন না। সাক্ষাৎ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ণ হইলেই জগতের কল্যাণ হইবে,এই প্রকার চিন্তা করিয়া শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য শিরধ্বনীর তীরে বসে, গঙ্গা জল তুলসী দিয়ে, নয়ন জলে বুক ভাসিয়ে, এসো গৌর এসো বলে  শ্রীকৃষ্ণ - পাদপদ্মে পূজাবিধান করতঃ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতরণের জন্য হুঙ্কার করিতে লাগিলেন। শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যের ভক্তি আর অনুরাগের শক্তিতে ভগবান করুণার নিলয় হয়ে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু রুপে জগতের বুকে আবির্ভুত হন।

"তুলসীমঞ্জুরীসহিত গঙ্গাজলে।
নিরবধি সেবে কৃষ্ণে মহাকৌতুহলে।।
হুঙ্কার করয়ে কৃষ্ণ আবেশের তেজে।
যে ধ্বনি ব্রাহ্মাণ্ড ভেদি বৈকুণ্ঠতে বাজে।।
যে প্রেমের হুঙ্কার শুনিঞা কৃষ্ণনাথ।
ভক্তিবশে আপনে যে হইলা সাক্ষাৎ।।"
                                (চৈতন্যভাগবত আদিলীলা)
‘’অনর্পিতচরীং চিরাৎ করুণয়াবর্তীণ কলৌ, সমর্পয়িতুমুন্নতোজ্জ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়ম্।
পুরতসুন্দরদ্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ, সদা হৃদয়কন্দরে স্ফুরদু বঃ শচীনন্দনঃ।।

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে পাওয়া যায় পূর্বে বহুকাল পর্যন্ত যা অর্পিত হয়নি এবং উন্নত উজ্জ্বল রসময়ী নিজের ভক্তি সম্পদ দান করার জন্য যিনি করুনাবশত কলিযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন, যিনি স্বর্ণ থেকেও সুন্দর দ্যুতিসমূহের দ্বারা সমুদ্ভাসিত, সেই শচীনন্দন শ্রীহরি সর্বদা তোমাদের হৃদয়-কন্দরে স্ফুরিত হোন। ” (চৈ.চ.আদি)

১৪০৭ শকাব্দ (ইং ১৪৮৬ সালের ফেব্রুয়ারী) ফাল্গুনী পূর্ণিমার সন্ধ্যা। চন্দ্রগ্রহণ চলছিল। ভারতীয় বৈদিক রীতি অনুসারে, চন্দ্রগ্রহণের সময় দিনান্তে মানুষ সাধারণত গঙ্গা অথবা কোন পবিত্র নদীতে গিয়ে স্নান করেন এবং জড় কলুষ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করেন। সকলে তখন সর্বশ্রেষ্ঠ বৈদিক মহামন্ত্র
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণকৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে I
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

জপ - কীর্ত্তন করছিলেন। দিব্য হরিনামের মঙ্গল ধ্বনিতে চারিদিক মাতিয়ে পশ্চিম বাংলার নবদ্বীপের শ্রীধাম মায়াপুর নামক স্থানে কলির প্রথম সন্ধ্যায় কলির পাপাহত জীবদের মুক্তির বিধানের জন্য কলিযুগের পাবনাবতার, সকলের সৌভাগ্যের উদয়কারী সেই মায়াপুরচন্দ্র শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভূত হন তাঁহার  মাতার নাম শ্রী শচীদেবী, পিতা শ্রী জগন্নাথ মিশ্র। কয়েকটি কন্যা সন্তানের পাশাপাশি মহান এই ব্রাহ্মন দম্পতির দুটি পুত্র সন্তান-শ্রী বিশ্বরূপ শ্রী বিশ্বম্ভর। নিম বৃক্ষের নীচে জন্মগ্রহন করায় তার নাম নিমাই। শ্রীবিশ্বরূপ সন্ন্যাস গ্রহনের পর শচী- জগন্নাথের একমাত্র অবলম্বন হল বিশ্বম্ভর (নিমাই) যাঁকে ভক্তরা ভালোবেসেমহাপ্রভুবলেও সম্বোধন করেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু ৪৮ বছর তাঁর অপ্রাকৃত লীলাবিলাস করেন। তাঁর জীবনের প্রথম ২৪ বছর তিনি নবদ্বীপে শৈশব গার্হস্থ্য লীলা পরবর্তী ২৪ বছর জগন্নাথ পুরী সহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কলিযুগের একমাত্র যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্ত্তন প্রচার কৃষ্ণভক্তিবিজ্ঞান শ্রীমদ্ভাগবত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সন্ন্যাস লীলা সম্পাদন করেন। মহাপ্রভু কেবল শ্রীমদ্ভাগবতের বাণীই প্রচার করেননি, তিনি ভগবদ্গীতার মূল তত্ত্বও অত্যন্ত ব্যবহারিকভাবে শিক্ষাদান করেছেন।

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শ্রীকৃষ্ণ নিত্য-প্রকাশ। কে অগ্রে, কে পশ্চাৎে, বলা যায় না। আগে চৈতন্য ছিলেন, পরে রাধাকৃষ্ণ হইলেন, আবার সেই দুই একত্র হইয়া এখন চৈতন্য হইয়াছেন, ইহার তাৎপর্য্য, কেহ আগে, কেহ পাছে, এরূপ নহে- দুই প্রকাশই নিত্য। কৃষ্ণ গৌরকিশোর ইহারা পৃথক তত্ত্ব নহেন, উভয়েই মধুর রসের আশ্রয়। একটু ভেদ এইমাত্র যে, মাধুর্য্যরসে দুইটী প্রকার আছে অর্থাৎ মাধুর্য্য ঔদার্য্য; তন্মধ্যে যেস্থানে মাধুর্য্য বলবৎ, সেইস্থানে কৃষ্ণস্বরূপ এবং ঔদার্য্য যেস্থানে বলবৎ সেইস্থানে শ্রীগৌরাঙ্গ স্বরূপ।

কলিকালে অবতার কেবল কীর্ত্তনাদি দ্বারা পরম দুর্লভ প্রেম সংস্থাপন করিবেন, তাহাতে অন্য তাৎপর্য্য না থাকায়, সেই অবতার সর্বাবতার শ্রেষ্ঠ হইলেও সাধারণের নিকট গোপনীয়। গৌরাঙ্গের যুগল রূপ দুই প্রকার,- অর্চ্চন মার্গে শ্রীগৌর - বিষ্ণুপ্রিয়া পূজিত হন, আর ভজনমার্গে শ্রীগৌর - গদাধর।

শ্রীগৌরাঙ্গদেবের চরণাশ্রয় করতঃ কৃষ্ণভজন না করিলে পরম পুরুষার্থ পাওয়া যায় না। সাধুমুখে হরিকথা শ্রবণ করাই সাধকের পক্ষে মঙ্গল শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর সাধকের পক্ষে গুরু-বৈষ্ণবের সাক্ষাৎ সঙ্গ তার ফলে হরিকথা শ্রবণ মাধ্যমে যে মঙ্গল উদয় হয়, জড়বুদ্ধি হয়ে বহু জন্ম বিগ্রহ অর্চন করেও তা হয় না। শ্রীগুরু-বৈষ্ণব কথার মাধ্যমে যে ভাব প্রকাশ করেন, শ্রীবিগ্রহ কৃপা করে আমাদের দর্শন দিয়েও তা করেন না। যিনি অন্তর্যামী ভগবান, তিনিও আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না। শ্রদ্ধা যদি না হয়, তা হলে সাধু দর্শন বা ভগবৎ দর্শন হয় না। বরং মৎসরতা বা হিংসা এসে উপস্থিত হয়। নিষ্কপটভাবে অকপট বৈষ্ণবগণের প্রীতির জন্য কায় - মনো বাক্যে অনুশীলন করতে হবে।বৈষ্ণবের আবেদনে কৃষ্ণ দয়াময়। হেন পামর প্রতি হবেন সদয় I I’’ এই কথা সর্বক্ষণ স্মরণ রাখতে হবে। যিনি শ্রীভগবান শ্রীগুরুদেব অচলা শ্রদ্ধা-বিশিষ্ট, তাঁরই হৃদয়ে পরমার্থ বিষয়ক সত্য বাক্য প্রকাশিত হয়।

কৃষ্ণসেবা ছাড়া আত্ম-আনন্দ লাভ অসম্ভব। ইন্দ্রিয় সুখ লাভ হতে পারে, কিন্তু আত্মার প্রসন্নতা লাভ হয় না। হরিভজন করলে শরীর মন আত্মা-তিনটি ভালো থাকবে, আর হরিভজন বিমুখ হলে তিনটিই প্রতিকূল হয়ে দাঁড়াবে। যে ব্যক্তি কপটতা যুক্ত হয়ে বাইরে কৃষ্ণভজনের অভিনয় দেখায়, অন্তরে কৃষ্ণের কাছে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ- এই কৈতবগুলি বাঞ্ছা করে, কৃষ্ণ তার অভিলাষিত এই সমস্ত কৈতব দিয়ে তাকে বঞ্চনা করেন, তাঁকে কখনও প্রেমভক্তি প্রদান করেন না।

প্রত্যেক যুগে ভগবানকে সন্তুষ্টি বিধানের জন্য আলাদা ভাবে ধর্মানুষ্ঠান করা হত। সম্ভন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতের (১২//৫২) শুকদেব গোস্বামী পরিক্ষিত মহারাজকে বলেন
কৃতে যদ্ধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং ঘজতো মখৈ। দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্ত্তনাৎ।‘’

অর্থাৎ, সত্যযুগে বিষ্ণুকে ধ্যান করে, ত্রেতাযুগে যজ্ঞের মাধ্যমে যজন করে এবং দ্বাপর যুগে অর্চন আদি করে যে ফল লাভ হত, কলিযুগে কেবলমাত্রহরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’’ কীর্ত্তনে সেই সকল ফল লাভ হয়।

কলিযুগের যুগধর্ম হচ্ছে নাম সংকীর্ত্তন। কলিযুগে তিন ভাগ অধর্ম এবং এক ভাগ ধর্ম। মানুষ অল্প আয়ু, অল্প মেধা,কলহ প্রিয়, এবং অধার্মিক। কিন্তু কলি যুগে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হল খুব অল্পতেই হরিনাম সংকীর্ত্তন করার মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করা যায়। চৈতন্যচরিতামৃতে বর্ণনা হয়েছে,-
কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার। নাম হৈতে হয় সর্বজগৎ নিস্তার।।
এই কলিযুগে ভগবানের দিব্যনামহরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রহচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবতার। কেবলমাত্র এই দিব্যনাম গ্রহন করার ফলে, যে কোন মানুষ সরাসরিভাবে ভগবানের সঙ্গ লাভ করতে পারেন। যিনি তা করেন তিনি অবশ্যই জড় জগত থেকে উদ্ধার লাভ করেন।


No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...